আড্ডা

রম্য রচনা (জুলাই ২০১৪)

রীতা রায় মিঠু
  • ১০
অনিক ভেবেছিল আজ বেলা করে ঘুম থেকে উঠবে, আর আজই কিনা সকাল সাতটা বাজতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো! যত দোষ ঐ খালাবুড়ীর, সাত সকালেই হামান দিস্তায় ট্যাং ট্যাং শব্দ তুলে পান ছেঁচছে। কি যে পানের নেশা রে বাবা!

ভাত খায়না, রুটি খায়না, খায় শুধুই পান।
চা কফি পান করেনা, পানের রস করে পান।

এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো অনিক, আজ আর ঘুম আসবেনা। অনেকদিন পর মাথায় ছড়া তৈরী হলো, তার মানে ব্রেন কাজ করতে শুরু করেছে। গত দুই মাস ধরে অনিকের মাথায় ছড়া আসেনি, পরীক্ষার চিন্তায় ব্রেনে ট্র্যাফিক জ্যাম লেগেছিল, গতকালই থিওরী পরীক্ষা শেষ হলো, প্র্যাকটিক্যাল শুরু হতে আরও দিন দশেক দেরী আছে, এর মধ্যে ব্রেনের ট্র্যাফিক জ্যাম কাটাতে হবে। মনে হচ্ছে, ট্র্যাফিক জ্যাম কাটতে শুরু করেছে। গত কয়মাস অনেক পড়াশুনা হলো, আজকের দিনটা একটু রিল্যাক্স করা দরকার, বাথরুম ঘুরে এসে অনিক ফোনের পাওয়ার বাটন অন করলো, সবক’টাকে ফোন করে বাসায় আসতে বললে কেমন হয়। পুরা দিন আড্ডা দেয়া যাবে। খালাবুড়ীকে একটু পটাতে হবে, বুড়ীর হাতের মোরগ পোলাও পৃথিবীর সবচেয়ে মজার খাবারগুলোর একটি, আজ মোরগ পোলাও রান্না করতে বলবে।

প্রথম ফোন করলো মুনাকে।
-হ্যালো, মুন, আজ চলে আয় আমাদের বাসায়, ধুম আড্ডা হবে।
-কাল মাত্র পরীক্ষা শেষ হয়েছে, আর আজই বাবুর আড্ডা দেয়ার শখ হলো!
-হ্যাঁ, আড্ডা দেবো, আসবি কিনা বল, আর কেউ না এলেও তুই অন্তত আসবি। একা একা ভালো লাগছেনা, ভানুর কৌতুকের একটা দারুণ কালেকশান হাতে এসেছে, গত রাতে দিলু মামা এসেছিল, ক্যাসেট রেখে গেছে আব্বুর জন্য।
-যা ভাগ! আঁতেল কোথাকার, ঘুম রেখে দৌড়ে তোর বাসায় এসে ভানুর ভাঁড়ামো শুনবো?
-মুন, ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি, থেকেছিস তো দেশের বাইরে, বাংলা জ্ঞান খুবই সীমিত, ভানু কে তাই তো চিনিসনা, ভানুর কৌতুক শুনতে চাওয়ার মধ্যে আঁতলেমী কোথায় পেলি? আঁতলেমীর মানে বুঝিস? কত বড় সাহস, ভানুকে বলিস ভাঁড়! আসতে হবেনা, আমি একাই থাকবো।

-অনিক, তুই এভাবে ঝগড়া করছিস কেন? বিদেশে কাটিয়ে এলেও আমার বাংলা জ্ঞান তোর চেয়ে ভাল। তুই বাংলার জাহাজ হয়েও ধার করা কৌতুক শুনিস, আমি বাংলায় মূর্খ হয়েও নিজেই অনেক কৌতুক জানি, ভানুর চাইতে আমার কৌতুক কি কম মজার হয়?

-মাফ চাইরে মুনা, মাফ চাই। এইজন্যই ভানুর কৌতুক শুনতে বলেছি, শুনলে বুঝতি, কৌতুক কত প্রকার ও কি কি?
-ঠিক আছে, আজকের আড্ডার বিষয় হবে ‘কৌতুক’। দেখি বাংলার পন্ডিত অনিক মির্জা তার ভানু খুড়োর কাছ থেকে কতটুকু কৌতুক শিখেছে আর বিদেশে থেকে কম জানা বাংলায় আমিইবা কতটুকু শিখেছি।

-আমি কৌতুক জানিনা, আমি শুনতে ভালোবাসি।

- তোর জন্য বিশেষ ছাড় দেয়া হবে, এতকাল ভানুর কাছ থেকে যা কিছু শিখেছো, পকেট থেকে সেটুকু বের করলেই খুশী হবো।

-মুন, এত রেগে গেলি কেন? দূর, আসতে হবেনা তোদের কাউকে, আমি আজ বরং শুয়ে থাকবো সারাদিন বলে ফোন রেখে দিল।


ঘন্টাখানেকের মধ্যেই রনি, দোদুল, ইমনকে নিয়ে মুনা অনিকদের বাড়ীতে চলে এলো, মুনা ওর গাড়ীতে করে সবাইকে যার যার বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসেছে। রনি, ইমন, মুনা, অনিক, দোদুল, ফারিয়া, নন্দন, সাতজনের গ্রুপ, সব সময় একসাথে আড্ডা, মুভি দেখা, থিয়েটার পাড়ায় যাওয়া, গ্রুপ স্টাডি করায় অভ্যস্ত। সাত জনের মধ্যে মুনার অবস্থান একটু ভিন্ন, ওর বাবা-মা থাকে আমেরিকায়, মুনাও আমেরিকাতেই বড় হয়েছে, সেখানেই স্কুল গ্র্যাজুয়েশান শেষ করে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু বাদ সেধেছেন মুনার দিদা, বুড়ীর নাকি হঠাৎ করে মতিভ্রম হয়েছে, উনি চেয়েছেন মুনা বাংলাদেশে চলে আসুক, দিদা যতদিন বেঁচে থাকবেন মুনাকে তাঁর সাথে থাকতে হবে। প্রথম নাতনীকে ছাড়া নাকি উনার দিন কাটেনা। মুনার মা এক কথাতেই রাজী, মেয়েকে তার বাপের বাড়ীতেই পাঠিয়ে দিবেন, কিন্তু মুনার বাবা কিছুতেই রাজী হচ্ছিলেননা, মেয়ে তাঁর কলিজার টুকরা, অসম্ভব মেধাবী, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এত কম বয়সে বাংলাদেশী কয়টা ছেলে মেয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়? তার মেয়েটা সুযোগ পেয়েছে, আর এখন শাশুড়ী মা বলছেন, নাতনীকে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিতে, স্ত্রীর সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে মুনার বাবা বলেই ফেললেন,
“যা খুশী চাইলেই হলো, এটা কি মামার বাড়ীর আবদার নাকি?”

হাসতে হাসতে মুনা উত্তর দিয়েছিল, “বাবাই, এটা তো মামাবাড়ীরই আবদার!”

শেষ পর্যন্ত মুনার দিদিমার আবদারই জয়ী হলো, তবে শর্ত হিসেবে মুনার দিদিমাকে একটি বিষয় মানতেই হলো, বছরে দুইবার মুনাকে ওর বাবা-মায়ের কাছে পাঠাতে হবে। মুনার দিদিমার জন্য এটি কোন ব্যাপারই ছিলনা, উনার চার ছেলে দেশে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, টাকাপয়সার অভাব নেই, ছেলেরা সারা বছরই হিল্লি-দিল্লী চষে বেড়ায়। ভাগ্নীকে বছরে দুইবার আমেরিকা পাঠানো কোন সমস্যা নয়।

মুনা চলে এলো বাংলাদেশে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি অনার্স ক্লাসে সবচেয়ে মেধাবী স্টুডেন্ট হিসেবে পরিচিতি পেতে মুনাকে খুব বেশী বেগ পেতে হয়নি। শুধু মেধাবী হিসেবেই নয়, বন্ধু হিসেবে মুনা সকলের কাছে প্রিয়তা অর্জন করেছে ওর দারুণ হিউমার সেন্সের জন্য। আমেরিকায় বড় হলেও যেহেতু দেশে আসা-যাওয়া ছিল, তাই মুনা বাংলা বেশ ভালোই বলতে পারে। আড্ডা-আসরে মুনার উপস্থিতি বরং আসরকে জমজমাট করে তোলে।




আজকের আড্ডায় নন্দন আর ফারিয়া অনুপস্থিত, ফারিয়ার বাসায় গেস্ট আছে আর নন্দনের মায়ের জ্বর এসেছে, রনিও প্রথমে আসতে চায় নি, ওর মন খারাপ, ফিজিক্স পরীক্ষা ভাল হয়নি, যদিও ফিজিক্স সাবসিডিয়ারী, তারপরেও পাশ-ফেলের একটা ব্যাপার আছে, ফেল করলে ওকে এর মাশুল দিতে হবে। মুনার জোরাজুরিতে রনি এসেছে, তবে ভেতরে ভেতরে খচখচানি রয়ে গেছে।
বন্ধুদের মধ্যে অনিক সবচেয়ে ধনী পরিবারের সন্তান, অনিকের বাবার যে কত টাকা আছে, অনিক তার কিছুই জানেনা। সে ব্যস্ত তার লেখাপড়া নিয়ে, আপাততঃ একটাই চিন্তা, যত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ ছেড়ে ভেগে যাওয়া যায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে নাকি ওর মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে। বাবা-মায়ের কষ্টের কথা ভেবে আত্মহত্যার মত ‘অতি সহজ কাজ’টুকু আর করা হয়ে উঠেনি।
ইমনের হাতে সব সময় ওর স্যামসাং গ্যালাক্সী ধরা থাকে, কথার ফাঁকে, পড়ার ফাঁকে কি করে যেন টুকটুক করে ফেসবুক চালিয়ে যায়। এখানেও সে টুক টুক করে টাইপ করছিল আর খুক খুক করে হাসছিল।
মুনা ওর পিঠে এক খোঁচা দিয়ে জানতে চাইল,
-কী রে, কোন আঁতেলের লেখা পড়ছিস আর এভাবে হাসছিস?
-সেইরাম আঁতেল, একজন আন্টি।
-আন্টি? কি লিখেছে, খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে?
-আরে নাহ! এই আন্টি ঐসব লেখেনা, ইয়াংদের সাথে পাল্লা দিয়ে উদ্ভট ইংলিশে সবার লেখায় কমেন্ট দিয়ে যায়।
-হা হা হা! কীরকম?
-এই যে দ্যাখ, কল্পের ওয়ালে একটা গানের লিঙ্কের নীচে লিখেছে, Oh, what song this, realy heart pain, kolpo, vary tuchy mind খেয়াল করিস, স্পেলিং-এর অবস্থা!
-হা হা হা! হা হা হা! মাইরালা আমারে, কেউ মাইরালা, আমি আর সইতে পারিনা, পুরাই লুল কমেন্ট। হি হি হি! হার্ট পেইন, ওহ! আমার হার্টে পেইন করছে রে, আচ্ছা, আন্টির নাম কি রে?
-নাম তো জানিনা, আন্টি আবার জাতে মাতাল, তালে ঠিক। নিজের ছবিও দেয়নি, নামও দেয়নি। ‘সুবাসিত গোলাপ’ আন্টির ইউজার নেইম, প্রোপিকেও গোলাপের ছবি, তবে সুবাসিত কিনা জানিনা।
অনিক বলল, শালা, তোর কথা শুনলে রাম গড়ুঢ়ের ছানাও হাসবো, “গোলাপের ছবি, তবে সুবাসিত কিনা জানিনা”। ফাজিল কোথাকার, এই ইমন শালার এত বন্ধু, বেশীর ভাগই ফাউ, যত সব বুড়া-বুড়ীর লগে বন্ধুত্ব, আরে বেটা, এইসব চাচী মার্কা মহিলাদের সাথে তোর এত কথা কি? আমাদের সাথে তো কেউ বন্ধু হতে চায়না!
-তো্রা বুঝবিনা, এই আন্টিদের সাথে কথা বললে অন্য রকম মজা পাওয়া যায়। ভুলভাল বলে ঠিকই, কিন্তু অনেক মায়া থাকে আন্টিদের কমেন্টে। ভুল কমেন্টগুলিই তো মজা বেশী।
দোদুল খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে, যেটুকু কথা বলে, খুব গুছিয়ে বলে। দোদুল বলল,
- আমার এক মামী আছে, ভাই রে ভাই, মামী জিনিস একখানা, ইংলিশ তো শুধু নিজেই বলেনা, আমাদেরকেও বলিয়ে ছাড়ে। বিশ্বাস করবিনা, মামীর নিজস্ব কয়েকটা ডায়লগ আছে, যেমন, মিতসুবিসি’ বলতে পারেনা, বলে, ‘মিসসুপিশি’, অ্যাপলিকেশানকে বলে ‘এপলিবিশন’, সসপ্যানকে বলে, ‘সসম্যান’, টমেটো সস’কে বলে ‘ টমাটো সলস’। টিয়া পাখীকে বলে ‘টিকা পাখী’।
-অই কি কইলি, মামীরে কই পামু, এখনই যাব মামীর সাথে দেখা করতে।
-উফ! সিরীয়াস!
-একবার হয়েছে কি শোন, আমার বয়স তখন সাত কি আট বছর, মামীর বিয়ের কয়েক মাস পরের কথা, ঢাকায় বানিজ্য মেলা চলছে, আমার মামা-মামী মফস্বলের মানুষ, হানিমুন-টুন তো আর বুঝেনা, নতুন জামাই-বউ বড়জোর সিনেমা হলে গিয়ে ‘রূপবান’, ‘হীরামন পাখী’ জাতীয় সিনেমা দেখে আসে। মামীর কাছে বানিজ্যমেলা একেবারে নতুন ছিল। তখন বানিজ্যমেলাকে অনেকে ‘একজিবিশান’বলতো, মামা আমাদের সবাইকে নিয়ে একজিবিশানে গেছিল। সবাই যখন একজিবিশান মাঠে ঘোরাঘুরি করছি্লাম, রোমান্টিক স্বামীতো বউকে খুশী করার জন্য এটা দেখায় ওটা দেখায়, কিনতু মামী হঠাৎ করে বলে উঠে, “ এতক্ষন ধইরা হাঁটা হাঁটি করতে আছি, কিনতু একজিবিশনতো এখনও দেখলামনা, পা ব্যথা করে, একজিবিশান কুন সময় দেখতে পামু?”
অন্য সবার কথা বাদ, এই কথা শুনে আট বছর বয়সী আমিও পর্যন্ত হেসে খুন। আমাকে হাসতে দেখে মামী থতমত খেয়ে যায়।

মুনা জিজ্ঞেস করলো, “ এই দোদুল, তোর মামী কোথায় থাকে?

-মামী এখন আমেরিকা থাকে।
-হোয়াট? ‘আপলিবিশান’ মামী আমেরিকা থাকে??
- থাকে, আমেরিকাতে তো সবার বাবা-মা থাকে, মামীর বেলায় বুঝি দোষ?
-দোদুল, ভালো হবেনা বলছি, বাবা-মা আমেরিকায় থাকে বলে খোঁটা দিচ্ছিস, হজম করতে পারছিনা কিন্তু, শেষে তোর গায়ে বমি করে দেবো।
-এই কাজটা ভুলেও করিসনা, সবাই কিন্তু আমার মত বুদ্ধিমান নয়, কি বুঝতে কি বুঝবে, জ্বর হয়ে যদি পনেরো দিন বিছানায় পড়ে থাকিস, এই গাধাগুলো তোর খোঁজ করতে কোথায় যাবে বল তো! ম্যাটারনিটি সেন্টারে।
-দোদুল, তুই অসহ্য।
-আমাকে অসহ্য বলছিস, আর রনির দিকে তাকিয়ে দ্যাখ, রনি কিন্তু আমার কথা বিশ্বাস করেছে। কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
-ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে তো তোকে দেখছি দোদুল, তোর মুখে এত খই ফুটলো কেন, সেটা বুঝার চেষ্টা করছি।
-আচ্ছা, যাহ, আর বেশী বকবক করবোনা।
-দোদুল, এপলিবিশান মামীর কথা শেষ কর, নাহলে তোর কপালে খালাবুড়ীর মোরাগ পোলাও জুটবেনা।
-কি করবো, মুনা তো আমার গায়ে বমি করে দিতে চায়, তখন তো কই মুনার জন্য মোরগ পোলাও নিষিদ্ধ করলিনা।
-আচ্ছা, এবার মামীর গল্প শেষ কর, শুনি, আমেরিকায় মামীর দিন কেমন কাটছে। মুনা তো আমেরিকা থেকে চলে এসেছে।
- তোরা তো জানিসনা, অ্যাপলিবিশান মামী কত স্মার্ট হয়ে গেছে! সেদিন ফোন করেছিল, বলে ‘লিমুজিন গাড়ী চড়লাম, গাড়ী হইলেও একেবারে বাসা বাড়ীর মত ব্যাপার।
-বাপরে! মামী ‘লিমুজিন’ বলতে পারে?
-হা হা হা! শুধু কি লিমুজিন? মামী অনেক কিছু পারে, ভালো কথা, মামী কিন্তু লেখাপড়া তেমন জানেনা, বানান করে বাংলা পড়ে, মামীর গল্প ফুরাবেনা। মামীর মেয়ে যখন কলেজে পড়তো, অবসরে মুখে পান গুঁজে মামী পাড়া বেড়াতে যেত, ফিরে আসতো রাজ্যের যত গল্প নিয়ে। একদিন ঘরে এসে আফসোস করে বলে, ‘ হুম! মানুষের কপাল, ঐতো ঐ পাড়ার দীপালীর মা-বাবা অস্ট্রেলিয়া গেছিলো মাইয়ার কাছে, দেখে, রাস্তার ধারে ধারে নাকি আপেল কমলার গাছ। দীপালীর বাপে ত আপেল বাগানে কাজ পাইয়া আপেল কুড়াইয়া কত ডলার যে রোজগার করছে! ইশ! আমার মাইয়াটার যদি বিদেশে বিয়া হইত, তাইলে আমিও আপেল বাগানে কাজ কইরা ডলার কামাইতাম!”

মামীর মেয়ের বিয়ে হয়েছে আমেরিকাবাসী ছেলের সাথেই। মামী নানাজনের কাছে খোঁজ নেয়, ছেলে বা মেয়ে কতদিনে মা-বাবাকে আমেরিকা নিয়ে যেতে পারে, মেয়ে যদি দেশে ফোন করে, মায়ের একটাই প্রশ্ন,” তোর সিটিজেন হইতে আর কতদিন লাগবো”।

-একসময় মামীর ভিসার কাগজপত্র চলে আসে, মামীও আমেরিকা যাওয়ার জন্য রেডী হতে থাকে। যাওয়ার দিন এগিয়ে আসতে আমি মামার বাসায় গেছি উনাদের সাথে দেখা করতে। গিয়ে দেখি মামী একনাগাড়ে ‘হেল্প, প্লীজ, ওয়াটার, ফুড’ এইসব আরও কি জানি বিড়বিড় করে চলেছে, সারা মুখে চোখে টেনশানের ছাপ। শুনতে পেলাম, দুইদিন আগে আমার বোন নাকি মামীকে ফোনে তোতা পাখীর মত শিখিয়েছে, এয়ারপোর্টে গিয়ে কিভাবে মামার জন্য হুইল চেয়ার চাইতে হবে, কিভাবে পাসপোর্ট, প্লেনের টিকিট দেখাতে হবে, ‘এক্সকিউজ মী’ বলে কিভাবে এয়ারহোসটেসকে ডাকতে হবে। মামী কিনতু ধরতে পারে খুব তাড়াতাড়ি।
বোন নাকি বলেছে যে আর কিছু যদি না পারেন, তাহলে শুধু হাত তুলে বলবেন,’ নো ইংলিশ, হেল্প প্লীজ, মাই হাজব্যান্ড, সিক, হার্ট পেশেন্ট, হেল্প’, শুধু এটুকু বললেও দেখবেন হেল্প পাবেন’।
আমি আরেকটু যোগ করে দিলাম, ‘শুনেন নিউইয়র্কে বা যে কোন জায়গায় গিয়ে কালো মানুষ দেখলে আবার ‘নিগ্রো’ বলে ফেলবেননা, বলবেন ‘ব্ল্যাক’।
একটুক্ষণ পরেই মামীকে জিজ্ঞেস করলাম, কালো মানুষকে কি বলবেন? মামী বললো,’নিগ্রু কমু’। হাসতে হাসতে বললাম,’নিগ্রু কইলে সেই নিগ্রু বেটা বা বেটি আপনাকে মাথার উপর তুলে দিবে একটা আছাড়’।
বললাম, অত টেনশানের কিছু নেই, এয়ার হোস্টেসের সাথে কথা বলবেন যে কোন সমস্যা হলেই।
মামী বলে, জানি, এসকিউজ মী, ওয়াটার গিভ!
বললাম, সমস্যা নাই, ঠিক আছে।

-বাপরে! তোর মামী ঠিকমত আমেরিকা পৌঁছেছিল?
-পাক্কা। বললাম তো, মামী খুব স্মার্ট।

মামাতো বোনের সাথে আমার স্কাইপে কথা হয়। একদিন মামীকে ডাকলাম স্কাইপে, স্কাইপে মামীকে দেখে আমি তো আঁতকা উঠছি। প্যান্ট-শার্ট পরণে, আমারে জিগায়,
হ্যালো, দুদুল কেমুন আছ?
আমি বলি, মামী, আমেরিকায় থেকে এখনও আমাকে ‘দুদুল’ ডাকেন কেন? ডুডুল ডাকতে হবে তো! তা আপনি কেমন আছেন, কোথাও গেছিলেন নাকি?
-ইয়া! লিবার্টি ‘স্টেচু’ দেইখা আসলাম। এহন আমি ড্যাম টায়ার্ড, ভুল কইরা ‘এসপেস ট্রেনে’ উইঠ্যা পড়ছিলাম। আর এই ঠান্ডার মইদ্যে চড়কী ঘুরা ঘুরছি। অখন আমার কথা কওয়ার শক্তি নাই, ঠান্ডায় জইম্যা গেছি”।
অনিক বলল, এসপেস ট্রেন কি এক্সপ্রেস ট্রেনের কথা বুঝাইছে? আর লিবার্টি স্ট্যাচু নিশ্চয়ই স্ট্যাচু অব লিবার্টি!

-আরে হ, শোন না, আমি কই, মামী, ‘এসপেস ট্রেনে কেমনে উঠলেন, সাথে কেউ ছিলনা?
-ছিল, বুবলীর ভাগ্নী আর ভাগ্নী জামাই। বুবলীগো বাসায় বেড়াইতে আসছে, আমারে পাইয়া তো মহাখুশী, খুশীর ঠেলাতেই ‘মিসটেক’ করছে।
- আহারে! কিন্তু একটু বলেন কেমন দেখছেন সবকিছু।“

- শোন, বুবলীর ভাগ্নী জামাই খুবই ভালো, তার অন্তর–বাহির দুইই ভালো, আমারে ‘জাপানী রেস্টুরেন্টে’ খাওয়াইছে। আঠা আঠা ভাতের ফিতার ভিতরে চিকেন, শাক প্যাঁচাইন্যা। কি জানি কয়, খুশী না জানি চুশি।
-মামী, সুশী।
মামীর কথা শুনে হাসতে পারছিলামনা, পিছনে দাঁড়াইয়া ছিল বুবলী, সুশী’র নাম ‘খুশী’ শুইনা বুবলী হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়ছে।
মামী কয়- উপস! সরি, মাই মিসটেক, আসলে মাথার ঠিক নাই, টু মাচ কোল্ড তো আউটসাইডে।
বললাম, এঃ হে, মামী সুশীতে তো কাঁচা মাছ থাকে।
বলে, বুঝি নাই ত, ঝাল ‘মাস্টার সলস’ মাখাইয়া খাইছি, কাঁচা মাছের গন্ধ ত পাই নাই, খাইতে খুবই ভালো।
-‘মাস্টার সলস’ আবার কোনটা?
-সরিষা আছেনা বাংলাদেশে, সেই সরিষা বাটা দিয়া বানায় এই সলস, ঝাঁঝ ভালই।
- স্টেচু কেমন দেখলেন?
-স্টেচু দেখার আগে মোম দিয়া বানানো মানুষ দেখতে গেছি, শাহরুখ খান, অমিতাভবচ্চন, ক্লিন্টন, ওবামা সবার লগে ছবি তুলছি। এরপর জাহাজে কইরা গেছি ‘স্টেচু’ দেখতে, ঐখানে এমুন বাতাস যে জাহাজে উঠতেই দাঁত কপাটি লাইগ্যা পইড়া যাওয়ার যোগার, জামাইতো শুধুই ‘নানী, নানী করতেছে। কথা কমু কেমনে, আমি তো ঠান্ডার চোটে মুখই ‘ওপেন’ করতে পারিনা, তখন ঐ জাহাজের এক ‘নিগ্রু’ দারোয়ান( শিপ গার্ড),নাতনী জামাইয়ের দেখাদেখি আমারে কয়, “নেনি, ওয়েইট, আই হেল্প ইউ’”। ঐ নিগ্রুটাই ধইরা ধইরা বাইরে আইন্যা স্টেচু দেখাইয়া আবার ভিতরে বসায় দিয়া গেছে।“

আমি জিজ্ঞেস করি, ও মামী, আপনার কি ভালো লাগছে মামারে ছাড়া এতকিছু দেখতে?

মামী কয়, হ আমার খুব ভালো লাগছে। এইটা কি বাংলাদেশ যে তোমার মামার পিছে পিছে হাঁটমু, এইটা হইল আমেরিকা, সবাই স্বাধীন, নারী-পুরুষ বইলা আলাদা কিছু নাই। তোমার মামারে এই ওয়েদারে বাইরে নিলে নিমুনিয়া অইয়া হিটকি লাইগ্যা থাকতো, হাসপাতালে নেওন লাগতো, স্টেচু আর দেখন লাগতোনা, জানোনা তো, উইন্টারে এইখানে টু মাচ কোল্ড!”

দোদুল বোধ হয় আরও কিছু বলতো, কিন্তু খেয়াল করলো, অনিক মুনার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, দোদুলের গল্প শুনছেনা, আর মুনা শুধুই খিল খিল করে হাসছে, আবার থামছে, আবার হাসছে। দোদুল চুপ করে গেলো। ইমন মুনার মাথায় এক চাঁটি মারতেই মুনা সোজা হয়ে বসে ওড়নার আঁচলে জলে ভেজা দুই চোখ মুছে বলল,
-ওরে দো্দুল, তোর মামীর আমেরিকা বিজয়ের গল্প শুনে আমার মামণির একটা গল্প মনে পড়ে গেলো। মা-খালাদের নিয়ে যাই কোথায়!
ইমন বলে, এই মুন, আন্টিকে নিয়ে ফাজলামো করবিনা।

-মামণিকে নিয়ে আমি সব সময় মজা করি, শোন, মামণি তো এমনিতেই অনেক স্মার্ট, আমেরিকা গিয়ে আরও বেশী স্মার্ট হয়েছে। বেশী স্মার্ট হওয়ার ফল কি হয়েছে শোন। ওদেশে তো মেয়েরা হাত-পায়ের পশম হেয়ার রিমুভার দিয়ে তুলে ফেলে। মামণি তো ঠিক করেছে, হাঁটুর নীচ পর্যন্ত ঝুল দেয়া লং ড্রেস পরবে, তাই হেয়ার রিমুভার কিনে নিয়ে এসেছে, কিন্তু রিমুভার ব্যবহার করার নিয়ম পড়েনি। গোড়ালী থেকে বেশ খানিকটা উপরে পায়ের যে অংশটুকু দেখা যাচ্ছে, সেখানে পায়ের পশম খুব বাজে দেখা যাচ্ছিল, আমাকে বলল,

“মুনা, তোর বাবাই মানা করেছে হেয়ার রিমুভার ইউজ করতে, কিন্তু এভাবে পায়ের লোম দেখা গেলে কি ভাল লাগে?
আমি বলেছি, তাহলে এই ড্রেসটা পরোনা।

মামনি বলে, কেন পরবোনা, আমি কি আরব দেশে এসেছি নাকি যে আলখাল্লা পরে ঘুরবো?
-তাহলে কি করতে চাও?
-তুই একটু হেয়ার রিমুভার দিইয়ে আমার পা দুটো ক্লিন করে দে।

আমি রিমুভার লোশান পায়ে মাখিয়ে দশ মিনিট অপেক্ষা করতে বলে বাথরুমে গেছি। বাথরুম থেকে বের হওয়ার আগেই শুনি মামণি চেঁচাচ্ছে, ‘মুনা, মুনা জ্বলে যাচ্ছে, জ্বলে যাচ্ছে’।
দৌড়ে এসে দেখি, পেপার টাওয়েল দিইয়ে ঘষে ঘষে পায়ের চামড়া লাল করে ফেলেছে। আমি তো অবাক হয়ে গেছি, বলি, মামণি, তোমাকে বলে গেছি, নিয়ম হচ্ছে দশ মিনিট পর ভেজা কাপড় দিইয়ে জেন্টলী ঘষতে হয়, দশ মিনিট তো হয়নি, তুমি কেন এভাবে ঘষেছো?

মামণি বলে, “বেটাদের মত ঘষঘষা পায়ের লোম, জেন্টলী ঘষাতে উঠে নাকি? এইজন্যই তো কাগজ দিয়ে জোরে ঘষেছি”।
-ভাল হয়েছে, বেটাদের মত লোম পায়ে বাইরে যাবেনা, এখন তোমার সতীনের মত লাল টুকটুকে পা দেখিয়ে বাইরে যাও।


এতক্ষণে রনির মুখে হাসি দেখা গেলো। হাসতে হাসতেই রনি জিজ্ঞেস করলো,
-তোর বাবার কি দুই বিয়ে নাকি রে মুন?
মুনা চোখ টিপ দিইয়ে বলল,
-দুই বিয়ে করবে, এত বড় কলিজা নিয়ে আমার বাবাই জন্মায়নি, মনের মধ্যে একটু একটু ইচ্ছে হয়তো আছে, কিন্তু মামণির ভয়ে প্রকাশ করতে পারেনা।

-ভাই, এক বউ নিয়ে সংসার করার মধ্যে কোন কৃতিত্ব নাই।
-তাই নাকি রে অনিক, তাহলে তো মুনাকে এখন থেকেই সাবধান হতে হবে।

দোদুল বলল, মুনা, তোর মায়ের সতীনের রহস্যটা পরিষ্কার করতো।

আমরা তখন পেনসিলভেনিয়া থাকি। যে বাড়ীতে ভাড়া থাকতাম, সেটা ছিল রাস্তার সমতলে, তার উলটো দিকের বাড়ীটা ছিল টিলার উপর। উলটা দিকের বাড়ীর মহিলা ছিল সাদা, আর তার হাজব্যান্ড ছিল ব্ল্যাক। মহিলাটা ছিল ইয়া মোটা, আর জামাই ছিল খুব শক্ত পোক্ত আফ্রিকান। মামণির ধারণা, মহিলা ছিল রেসিস্ট, কারণ ওদের কুত্তার নাম রেখেছিল ‘এশিয়া’। আসলে কি হয়েছে জানিস, মহিলা কোনদিন আমার মামণির সাথে ‘হাই’ হেলো’ জাতীয় কথাও বলতোনা, কিন্তু বাবাইকে পথে দেখা হলেই ‘হাই, হেলো’ করতো। দাঁড়িয়ে দুই এক মিনিট কথাও বলতো।

দোদুল বলল, কিছু গায়ে নিস না মুনা, তোর বাপটা কিন্তু ভীষণ মাচো দেখতে।
-অ্যাই দোদুল, তুই এমনিতে সহজে মুখ খুলিসনা, এদিকে জায়গামত ঠিক অ্যাডজেকটিভ বসিয়ে দিস। হা হা হা! বাবাই তো আসলেই দারুণ স্মার্ট, কিন্তু মামণির সামনে তা বলা যাবেনা। মামণি তো ঐ মহিলাকে দুই চক্ষে সহ্য করতে পারতোনা, বাবাই শুধু বলতো, নিকোল মোটা হলেও মানুষ কিন্তু ভাল।
মামণি তো এই কথা শুনে কেঁদে কেটে অস্থির। বলে, তাহলে আর কি, যাও, মুটকীকেই বিয়ে করো।
-বাবাই বলে, আমি চাইলেই নিকোল রাজী হবে কেন? ও তো জানে, তুমি ওকে দুই চোখে দেখতে পারোনা।

সেদিন থেকেই আমি নিকোলকে মামণির সতীন বলে খেপাতে শুরু করি। সতীনের একটা জবর গল্প আছে। একদিন সকালবেলা আমি আর ডোনা জানালার কাছে বসে আছি, জানালা দিয়ে সাদা মেমের বাড়ী তো স্পষ্ট দেখা যায়। সকালের দিকেই ওরা এশিয়াকে ছেড়ে দেয়, এশিয়া ঢাল বেয়ে দৌড়ে নীচে নেমে আসে আবার উপরে উঠে যায়। আমরা এশিয়ার খেলা দেখছিলাম, হঠাৎ মোটা মেম রাতের পোশাক পরেই বাইরে এসেছে। ছোট্ট একটা জামা, হাঁটুর অনেক উপরে জামার ঝুল, মোটা মোটা পা, বুঝিসই তো, ‘কাল্লু’ জামাইয়ের বউ, কেমন আর হবে। এশিয়া ছুটোছুটি করছে, আমি আর ডোনা মুগ্ধ চোখে দেখছি, মেম দুই সিঁড়ি নেমে এসে ঢালের জমি থেকে নীচু হয়ে কিছু তুলতে গেছে। মেমের পেছন ছিল আমাদের দিকে,হায় হায়, জামার নীচে কোন আন্ডার গার্মেন্টস ছিলনা, বেটি তো জানেনা যে আমাদের ঘরের জানালা থেকে সব দেখা যায়। আমি আর ডোনা তো বেটির নেংটো পাছা দেখে হাঁ হয়ে গেছি। ডোনা বলে, ‘মুনা মুনা, দ্যাকো দ্যাকো, পুশী ক্যাত, পুশী ক্যাত’। আমি ডোনার মুখ চেপে ধরেছি যেন মেম শুনতে না পায়, শুনলেই তো সাবধান হয়ে যাবে, আর এই নেংটো পাছা দেখা যাবেনা।
-ডোনা পুশী ক্যাট বলছিল কেন?
-আরে, ডোনাকে যখন শাওয়ার করিয়ে মামণি গা মুছে দিত, তখন তো ওকে নাঙ্গু থাকতে হতো, মামনি ছড়া কেটে বলতো, পুশী ক্যাট পুশী ক্যাট, হোয়ার হ্যাভ ইউ বিন”, ডোনা হয়তো ভেবেছে, নাঙ্গু মানেই পুশী ক্যাট।
আমি এক দৌড়ে ভেতরের ঘরে গিয়ে বাবাইয়ের সামনেই মামণিকে বলে দিয়েছি, “মামণি, দেখবে এসো, বাবাইয়ের সাদা মেম বন্ধুর নেংটু পাছা, ছি ছি, জামার নীচে জাঙ্গু পড়েনি”।

মামণি তো আমার মুখে এসব অসভ্য কথা শুনে পুরা টাসকি মেরে গেছে, ডোনাও এসে যোগ দিয়েছে, বলে ‘পুশী ক্যাত পুশী ক্যাত দেকছো’।
বাবাই গম্ভীর গলায় বলেছে, ‘মাগো, অন্য বাড়ীর দিকে এভাবে তাকাতে হয়না, মানুষ অসাবধানে থাকলে একটু আধটু ভুল হয়ে যায়, এগুলো নিয়ে মজা করতে নেই’।

-মুনা, তোর আজকের গল্পে মজা পাইলামনা, এইসব গল্প শুনে কিছু হয়না, নিজের চোখে দেখতে হয়, তার চেয়ে দোদুলের মামীর গল্প বেশী মজা পাইছি, কিছু মাইন্ড খাইসনা দোস্তি।

-অনিক, তুই তো মজা পাবিনা, তুই ত পরজীবী, নিজে তো পারো কচু, শুধু আমার পেছনে লাগো।
-আরে, তুই কি সাদা মোটা মেম নাকি? আর আমি কি তুই যে তোকে পেছন থেকে দেখবো?


ইমন বলল, আবহাওয়া শীতল হোক, ঝগড়াঝাঁটি বন্ধ, এই দ্যাখ, আমার সুবাসিত গোলাপ আন্টি কি লিখছে, hello Imon, how ur test? Read only read. So test is fantastic. My son test finish. He is very good. He only read and write, result Fass clash. Your result also fass clash. Take care, love you like rose.

সুবাসিত গোলাপ আন্টির অশ্রুতপূর্ব ইংরেজী কমেন্ট পড়া শেষ হতে না হতে বিছানা, চেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে থাকা পাঁচ বন্ধু হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপর হুমড়ী খেয়ে পড়লো তো বটেই, এরপর খিল খিল হাসিতে ঘর ভরিয়ে মেঝেতে কিছুক্ষণ গড়াগড়িও খেলো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম খান আপনার লেখার একটা স্টাইল আছে । এগিয়ে যান , থামবেন না । ভাল লাগলো ।
সাদিয়া সুলতানা বেশ ভাল লাগল। অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম। শুভকামনা।
তাপস চট্টোপাধ্যায় ভিসন ভালো লেখার হাত.চালিয়ে যান.
মোজাম্মেল কবির প্রথমেই ২৯ তম বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছা... সত্যিকারের হাসির গল্প যেমন হওয়া উচিৎ শত ভাগ তেমন। অল্প শিক্ষিত অর্ধ শিক্ষিত বাঙ্গালীর আমেরিকার মতো একটি দেশে অভিবাসনের সুযোগ ভিন্ন সংস্কৃতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে এমন হাস্যকর অনেক ঘটনাই ঘটে চলেছে প্রতি দিন। আপনার মতো মজা করে কজন তুলে ধরতে পারে জানি না... ভালো থাকুন। খুব হাসলাম। আনন্দ পেলাম।
পুলক বিশ্বাস আমার বেশ লেগেছে। খুব মজার এবং কতগুলো মিস্টি শিশুতোষ শব্দগুচ্ছ দারুণ লেগেছে। love you like rose কমেন্টসগুলোও মজাদার। আমার কবিতা পাড়ায় আপনাকে স্বাগতম জানাই। নিরন্তর শুভকামনা থাকলো।
সকাল রয় বেশ আপ্লুত হইলাম___ আহা!
প্রজ্ঞা মৌসুমী এরকম দুই-একটা মা, মামী, এবং সুবাসিত গোলাপ আন্টি না থাকলে জীবনটা পানসে মনে হতো। cafeteria কে পাছারিয়া, squirrel কে স্কুরাল এরকম নিত্য নতুন কত যে শব্দ শিখি। সেদিন শুনছিলাম 'প্লেনে জানালা থাকে না, window থাকে। আবার উল্টোটাও হয়- প্রবাসে ইংরেজীতে অভ্যস্ত ছেলেমেয়েদের বাংলা-ইংলিশ মিশিয়ে বলার চেষ্টা শুনলে হাসিও পায়, মায়াও লাগে। এই যেমন, sit করো, love you তোমাকে... ডোনার পুশী ক্যাট, রেজাল্ট ফেশ ক্লাস, হেয়ার রিমুভার পার্ট- সবকিছু মিলিয়ে রম্যরসে ভরপুর।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি এশিয়া ছুটোছুটি করছে, আমি আর ডোনা মুগ্ধ চোখে দেখছি, মেম দুই সিঁড়ি নেমে এসে ঢালের জমি থেকে নীচু হয়ে কিছু তুলতে গেছে। মেমের পেছন ছিল আমাদের দিকে,হায় হায়, জামার নীচে কোন আন্ডার গার্মেন্টস ছিলনা, বেটি তো জানেনা যে আমাদের ঘরের জানালা থেকে সব দেখা যায়। আমি আর ডোনা তো বেটির নেংটো পাছা দেখে হাঁ হয়ে গেছি। ডোনা বলে, ‘মুনা মুনা, দ্যাকো দ্যাকো, পুশী ক্যাত, পুশী ক্যাত ......// রীতাদি অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম.... লেখার পুরোটা জুড়ে সেই রীতা রীতা ফ্লেভার.....প্রকৃত রম্য রস লেখার কোষে কোষে ছড়িছে রয়েছে.......শেষের দিকে তো আরো মজা ....আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ .....আমার লেখা পড়বার আমন্ত্রণ জানিয়ে শেষ করছি.............ধন্যবাদ।
জ্যোতি দাদা, অনেকদিন পর এলাম, এত সুন্দর কমেন্ট করেছো, খুব ভালো লাগছে। কী জানি, এখন তো দেখছি আমার গল্প খুব বেশী পাঠকের কাছে পৌঁছেনা। তোমার কাছে পৌঁছেছে, সমৃদ্ধ হয়েছি। তোমার গল্প পড়বো বলে বসে আছি।
সহিদুল হক -ভাল লাগলো গল্পটি। বেশ মজার! --শুভ কামনা।
অনেক ধন্যবাদ শহীদুল ভাইয়া!
এফ রহমান গত সংখ্যায় ঠিক করে রেখেছিলাম এই সংখ্যায় প্রথমেই পড়বো রীতাদির গল্প। পড়ে ফেলেছি। ভালো লাগলো। ভাষার ব্যবহার চমৎকার্। পরের সংখ্যার অপেক্ষায় রইলাম।
রহমান ভাই, তোমার কমেন্ট পড়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিও তোমার গল্প প্রথম পড়বো, তারপর জ্যোতি দাদার গল্প।

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪